স্বদেশ ডেক্স: কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইরান ও ইয়েমেন উপকূলের উপসাগরীয় নৌসীমায় নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে একটি জোট গঠনের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চরম উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এই জোট গঠনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। মঙ্গলবার দেশটির এক শীর্ষ জেনারেল সংবাদমাধ্যমকে এ কথা বলেন।
দেশটি আগামী দুই সপ্তাহ বা ওই রকম সময়ের মধ্যে এই জোটে যোগ দিতে ইচ্ছুক মিত্রদের নাম তালিকাভুক্ত করার আশা করছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান মেরিন জেনারেল যোসেফ ডানফোর্ড। ওই উপকূলগুলোতে ইরান ও ইরান সমর্থিত যোদ্ধারা বিভিন্ন জাহাজে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওয়াশিংটনের।
পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ওই সামরিক জোটের জন্য কমান্ড জাহাজ সরবরাহ করবে এবং নজরদারি প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেবে। মিত্র বাহিনীগুলোর জাহাজগুলো মার্কিন কমান্ড জাহাজগুলোর কাছাকাছি টহল দেবে এবং বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে পাহারা দেবে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সাথে বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের কাছে এসব বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন জেনারেল ডানফোর্ড। হরমুজ প্রণালী ও বাব আল মানডাব প্রণালীতে জাহাজ চলাচলের ‘স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করতে জোট বাহিনী মোতায়েন করা যায় কি না, তা নিয়ে বেশ কয়েকটি দেশের সাথে আলোচনা চলছে বলে এ সময় জানান তিনি।
উপসাগরীয় নৌসীমায় অবস্থানরত ট্যাংকারে কয়েক দফা হামলা চালানোয় যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দায়ী করায় এবং তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এ অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা চলছে। বিশ্বব্যাপী জাহাজযোগে সরবরাহ হওয়া তেলের এক-পঞ্চমাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়। প্রতিদিন এই প্রণালী হয়ে প্রায় ৪০ লাখ ব্যারেল তেল ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হয়। নিজেদের তেল রফতানি করতে না পারলে নিজেদের উপকূল সংলগ্ন প্রণালীটি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে ইরান।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে দেশটিকে একটি চুক্তিতে রাজি হতে বাধ্য করতে ইরানের তেল রফতানির লাগাম টেনে ধরতে চাইছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। অপর দিকে লোহিত সাগরকে এডেন উপসাগর ও আরব সাগরের সাথে সংযুক্তকারী বাব আল মানদেব প্রণালীটি ইয়েমেন সংলগ্ন। ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীরা বিভিন্ন সময় এই নৌপথে কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। মে মাসে ওমান উপসাগরে চারটি ট্যাংকারে হামলার পর গত মাসে ওই এলাকায় আরো দু’টি ট্যাংকারে হামলা হয়। মে ও জুন মাসে তেল ট্যাংকারের ওপর হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তেহরান সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জুন মাসে ট্যাংকারে হামলার কয়েকদিনের মাথায় একটি চালকবিহীন ড্রোন ভূপাতিত করে ইরানি বাহিনী। ইরানের দাবি, ড্রোনটি তাদের আকাশসীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমাতেই ছিল।
মার্কিন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড জানান, ‘হরমুজ ও বাব আল-মানদেব প্রণালীতে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে এমন একটি জোট গঠন করা যায় কিনা আমরা এখন সেটা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে কাজ করছি।’ ডানফোর্ড বলেন, ‘আমি মনে করি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা জানতে পারবো যে কোন কোন দেশ এমন জোট গঠনের ব্যাপারে আগ্রহী রয়েছে। এরপর আমরা সরাসরি সেসব দেশের সাথে এ জোট গঠনে কাজ করব।’ জেনারেল ডানফোর্ড জানান, উদ্যোগের আকার কেমন হবে তা নির্ভর করবে কতটি দেশ এতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অংশীদারদের সংখ্যা যদি কম হয়, তবে আমাদের মিশনও ছোট হবে।’
গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, তিনি আশা করছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ বিশ্বের ২০টির বেশি দেশ সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোট গঠন বিষয়ে একত্রে কাজ করবে। পম্পেও বলেন, এ জোটে ‘আমরা আপনাদের সবার অংশগ্রহণ চাচ্ছি।’ তবে এ জোটে অংশগ্রহণের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি বলে দিয়েছেন, এর ব্যয় যুক্তরাষ্ট্র বহন করবে না।